অনুশীলণ ১ : হারানো স্বপ্নের খোঁজে
একটি ছোট্ট গ্রামে বাস করত রাহুল নামের একটি ছেলে। রাহুল ছিল খুবই মেধাবী এবং স্বপ্নদর্শী। তার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে একজন ডাক্তার হবে। সে প্রতিদিন স্কুলে যেত এবং পড়াশোনায় খুব মনোযোগী ছিল। কিন্তু তার পরিবার ছিল খুবই দরিদ্র। তার বাবা একজন কৃষক এবং মা গৃহকর্মী। তাদের আয় খুবই কম ছিল, তাই রাহুলের পড়াশোনার খরচ চালানো তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল।
একদিন রাহুলের বাবা তাকে বলল, "বেটা, আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। তুমি যদি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাও, তাহলে তোমাকে কিছু কাজ করতে হবে।" রাহুলের মন খারাপ হয়ে গেল, কিন্তু সে জানত যে তার স্বপ্ন পূরণের জন্য তাকে কিছু করতে হবে। তাই সে সিদ্ধান্ত নিল, পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু কাজ করবে।
রাহুল গ্রামের একটি দোকানে কাজ শুরু করল। সকালে স্কুলে যেত, তারপর দোকানে কাজ করত এবং রাতে পড়াশোনা করত। তার কঠোর পরিশ্রমের ফলে সে ক্লাসে প্রথম হতে লাগল। কিন্তু কাজের চাপ এবং ক্লান্তির কারণে মাঝে মাঝে তার পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারত না। তবুও, সে হাল ছাড়ল না।
একদিন স্কুলে একটি বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত হল। রাহুল তার প্রজেক্ট নিয়ে অংশগ্রহণ করল। সে একটি মডেল তৈরি করেছিল যা মানুষের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজ বুঝাতে সাহায্য করত। তার প্রজেক্টটি সবার নজর কাড়ল এবং সে প্রথম পুরস্কার পেল। এই সাফল্যে রাহুলের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেল।
কিন্তু তার জীবনে একটি বড় বিপর্যয় ঘটল। একদিন তার বাবা মাঠে কাজ করতে গিয়ে আহত হলেন। চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন ছিল, কিন্তু রাহুলের পরিবার তা জোগাড় করতে পারল না। রাহুলের মনে তখন একটাই চিন্তা ঘুরছিল, "কিভাবে আমি বাবাকে বাঁচাব?" সে দোকানে কাজ করা বন্ধ করে দিল এবং গ্রামের মানুষের কাছে সাহায্য চাইতে শুরু করল। কিন্তু কেউই তার সাহায্যে এগিয়ে আসল না।
রাহুল হতাশ হয়ে পড়ল, কিন্তু সে জানত যে তাকে কিছু করতে হবে। সে শহরে গিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিল। শহরে গিয়ে সে একটি রেস্তোরাঁতে কাজ পেল। সেখানে কাজ করে সে কিছু টাকা জমাতে লাগল। কিন্তু শহরের জীবন তার জন্য খুবই কঠিন ছিল। কাজের চাপ, ক্লান্তি এবং একাকীত্ব তাকে ভেঙে দিচ্ছিল।
একদিন রাহুল একটি হাসপাতালে গিয়ে দেখল, সেখানে অনেক মানুষ চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছে। সে ভাবল, "আমি যদি ডাক্তার হতে পারতাম, তাহলে আমি তাদের সাহায্য করতে পারতাম।" এই চিন্তা তার মনে নতুন করে স্বপ্ন জাগাল। সে সিদ্ধান্ত নিল, সে যেভাবেই হোক, ডাক্তার হবে।
রাহুল আবার পড়াশোনা শুরু করল। রাতে কাজ করার পর সে বই নিয়ে বসে পড়ত। তার কঠোর পরিশ্রমের ফলে সে আবার পরীক্ষায় ভালো ফল করল। এরপর সে একটি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য আবেদন করল। তার সাফল্যের খবর শুনে তার পরিবার খুব খুশি হল।
মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর রাহুলের জীবন নতুন করে শুরু হল। সেখানে সে অনেক নতুন বন্ধু পেল এবং তাদের সঙ্গে পড়াশোনা করতে লাগল। রাহুল জানত, তার স্বপ্ন পূরণের জন্য তাকে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। সে প্রতিদিন ক্লাসে মনোযোগী ছিল এবং পরীক্ষায় ভালো ফল করতে লাগল।
চার বছর পর, রাহুল মেডিকেল কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করল। সে এখন একজন ডাক্তার। তার বাবা-মা তার সাফল্যে গর্বিত। রাহুল গ্রামের মানুষের জন্য একটি ক্লিনিক খুলল এবং সেখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে শুরু করল। সে জানত, তার স্বপ্নের পেছনে যে কঠোর পরিশ্রম এবং সংগ্রাম ছিল, তা এখন সার্থক হয়েছে।
রাহুলের গল্প আমাদের শেখায় যে, স্বপ্ন পূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম এবং সংকল্প প্রয়োজন। জীবনের পথে অনেক বাধা আসবে, কিন্তু যদি আমরা হাল না ছাড়ি এবং আমাদের লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যাই, তাহলে একদিন আমরা আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারব।
অনুশীলণ ২ : বিজয়ের পথে
একটি ছোট্ট গ্রামে বাস করত রাহুল নামের এক যুবক। রাহুল ছিল খুবই মেধাবী এবং তার স্বপ্ন ছিল একজন সফল লেখক হওয়া। কিন্তু তার জীবনে একটি বড় বাধা ছিল—তার লেখার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ। গ্রামের স্কুলে লেখার জন্য কাগজ এবং কলমের অভাব ছিল। তবুও, রাহুল কখনো হাল ছাড়েনি। সে প্রতিদিন সকালে উঠে গ্রামের পুকুরের ধারে বসে লেখার চেষ্টা করত।
একদিন, রাহুলের মনে হলো, যদি সে বিজয় বাংলা টাইপ শিখতে পারে, তাহলে সে কম্পিউটারে লিখতে পারবে। সে গ্রামের এক বৃদ্ধের কাছে শুনেছিল যে, শহরে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। রাহুল ঠিক করল, সে শহরে যাবে এবং সেখানে প্রশিক্ষণ নেবে।
শহরে গিয়ে রাহুল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হলো। প্রথম দিন থেকেই সে কঠোর পরিশ্রম করতে শুরু করল। বিজয় বাংলা টাইপ শিখতে তার অনেক সময় লাগল, কিন্তু সে কখনো হতাশ হয়নি। প্রতিদিন সে নতুন নতুন শব্দ এবং যুক্তবর্ণ নিয়ে কাজ করত। তার শিক্ষকও রাহুলের প্রতি খুবই সহানুভূতিশীল ছিলেন। তিনি রাহুলকে বলেছিলেন, "কঠিন কাজের ফল সবসময় মিষ্টি হয়।"
এক মাস পর, রাহুল বিজয় বাংলা টাইপে দক্ষ হয়ে উঠল। সে এখন কম্পিউটারে দ্রুত লিখতে পারত। তার আনন্দের সীমা ছিল না। সে গ্রামের জন্য একটি ছোট গল্প লিখতে শুরু করল। গল্পটি ছিল গ্রামের মানুষের সংগ্রাম এবং তাদের বিজয়ের কাহিনী। রাহুলের লেখায় গ্রামের মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছিল।
একদিন, রাহুল তার লেখা গল্পটি একটি স্থানীয় পত্রিকায় পাঠাল। কিছুদিন পর, পত্রিকার সম্পাদক তার গল্পটি প্রকাশ করার জন্য যোগাযোগ করলেন। রাহুলের আনন্দের সীমা রইল না। তার প্রথম গল্প প্রকাশিত হলো এবং গ্রামের মানুষ তার প্রতি গর্বিত হলো।
রাহুলের লেখা শুধু গ্রামের মানুষের মন জয় করল না, বরং শহরের অনেক পাঠকও তার লেখা পড়তে শুরু করল। সে এখন নিয়মিত লেখালেখি করতে লাগল এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গল্প লিখতে শুরু করল। তার লেখায় যুক্তবর্ণের ব্যবহার ছিল চমৎকার, যা পাঠকদের মুগ্ধ করত।
একদিন, রাহুলের একটি গল্প একটি বড় প্রকাশনা সংস্থা প্রকাশ করতে চাইল। তারা রাহুলকে শহরে ডেকে পাঠাল। রাহুলের জন্য এটি ছিল একটি স্বপ্নের মতো। সে শহরে গিয়ে প্রকাশককে তার লেখা দেখাল। প্রকাশক তার লেখার প্রশংসা করলেন এবং বললেন, "তুমি সত্যিই প্রতিভাবান। তোমার লেখা আমাদের পাঠকদের জন্য নতুন কিছু নিয়ে আসবে।"
রাহুলের বই প্রকাশিত হলো এবং তা দ্রুত বিক্রি হতে লাগল। গ্রামে ফিরে এসে, রাহুল তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করল। গ্রামের যুবকরা তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখালেখিতে আগ্রহী হয়ে উঠল। রাহুল তাদের বিজয় বাংলা টাইপ শিখতে উৎসাহিত করল এবং সবাই মিলে একটি লেখালেখির ক্লাব গঠন করল।
এভাবে, রাহুলের লেখার মাধ্যমে গ্রামের যুবকদের মধ্যে নতুন একটি আন্দোলন শুরু হলো। তারা সবাই লেখালেখির মাধ্যমে নিজেদের চিন্তা প্রকাশ করতে লাগল। রাহুলের গল্পগুলো শুধু বিনোদনই নয়, বরং সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানও তুলে ধরতে লাগল।
গ্রামের মানুষ রাহুলকে "লেখক" নামে ডাকতে শুরু করল। রাহুল বুঝতে পারল, লেখালেখির মাধ্যমে সে শুধু নিজের স্বপ্নই পূরণ করেনি, বরং তার গ্রামের মানুষের জীবনেও পরিবর্তন আনতে পেরেছে। বিজয় বাংলা টাইপ শিখে সে যে নতুন দিগন্তের সন্ধান পেয়েছে, তা তার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন।
এভাবে, রাহুলের গল্প শুধু তার নিজের নয়, বরং পুরো গ্রামের মানুষের বিজয়ের কাহিনী হয়ে উঠল। লেখালেখির মাধ্যমে সে সকলের মনে আশার আলো জ্বালিয়ে দিল। রাহুল জানত, লেখার শক্তি অসীম এবং তা মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে।
এখন রাহুলের গল্প শুধু একটি গল্প নয়, বরং একটি আন্দোলন। সে জানত, বিজয়ের পথে চলতে হলে কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায় প্রয়োজন। আর এই শিক্ষা সে তার লেখার মাধ্যমে সকলকে দিতে চেয়েছিল।
এভাবেই রাহুলের জীবন বদলে গেল এবং তার লেখার মাধ্যমে গ্রামের যুবকদের মধ্যে নতুন উদ্যম সৃষ্টি হলো। বিজয়ের পথে চলতে চলতে, রাহুল বুঝতে পারল, সত্যিই লেখার শক্তি অসীম।

Comments
Post a Comment